জহিরের গোফ

বয়স যখন ১২ তে আটকা পড়ে ছিল, তখন থেকেই বিটিভির পর্দায় রবীন্দ্রনাথের ইয়া বড় দাড়ি গোফের ছবির মাঝে তার চেহারা খোজে বেড়াতো আমাদের জহির। পঞ্চম শ্রেনীর সমাজ বিজ্ঞান বইয়ে যখন প্রথম ওসমান গনির ধারালো গোফ গুলা চোখে পড়ে ওর, তখন সেই পৃস্টাতেই তার চোখ আটকে যায়। কল্পনায় ওসমান গনির গোফ গুলা আনমনে আঁকতে থাকে সে।
পরিস্কার বাচ্চা বাচ্চা চেহারায় কলম দিয়ে গোফ আঁকতে আঁকতে কেটে যায় কয়েক বছর।
কলমের কালির ফাক দিয়ে উকি দেয় কয়েকটা চুল।
এক কথায় বলতে গেলে "গাছে কাঠাল, গোফে তৈল"।

সেই থেকেই তার নিজস্ব গোফের গল্প শুরু।

অষ্টম শ্রেনীতে উঠে সর্বপ্রথম সে ব্লেইড কিনে। দুই টাকা দামের শার্প ব্লেইড।

বৃহস্পতি বারে স্কুল থেকে এসেই দেখে বাড়ির সবাই কোথায় যেন বেড়াতে গেছে।  আয়নার সামনে দাড়িয়ে নাকের নিচে উকি দেওয়া দু চারটা চুল ব্লেইড দিয়ে ক্লিন করে ফেলে।
পূনরায় আয়নার দিকে তাকাতেই সে তার ভয়ংকর রুপ উপলব্ধি করতে পারে।
সে ততক্ষনে বুঝে গিয়েছিল তাকে দু চারটে সদ্য গজে উঠা গোফেই ভাল লাগে।
মুভি দেখার প্রতি তার আলাদা দূর্বলতা ছিল, বাড়িতে কেউ না থাকায় সারারাত মুভি দেখা যাবে ভেবে টিভির সামনে বসে পড়ে, অক্ষয় কুমারের নিউ রিলিজ্ড মুভি "রাওডি রাথুর" মুভি চলছিল তখন টিভিতে।
মুভি দেখার পর তার মনে গোফ সম্পর্কিত বিপ্লব শুরু হয়ে যায়, সে ইন্সপায়ার্ড হয় রাওডি রাথুরের গোফ দেখে।

তখন থেকেই গোফের এক্সট্রা কেয়ার নিতে শুরু করে। তিলে তিলে গড়তে থাকে, পৌছতে চায় তার চির গন্তব্যে।
সে আরও বড় হয়, আরও ঘন হয়ে চুল উঠতে থাকে।

বছর খানেক আগে তার এতদিনের গড়া স্বপ্ন পূরনে সে সফল হয়।
এবং পুরো এলাকায় সবচেয়ে বিশাল গোফের অধিকারী হয়ে উঠে।

কিন্তু নিন্দুকেরাও থেমে থাকেনি, কত জনে কত কথা বলেছে। রহমাত আলী ভাই সকাল, বিকাল, দুপুর যেখানেই পেয়েছে সেখানেই গোফ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
তবে কিছু মানুষ তার গোফের প্রেমেও পড়েছে। অনেকেই তাকে ওসমান গনি বলে আক্ষায়িত করেছে, আবার অনেকেই রাওডি রাথুর / অক্ষয় কুমার বলে ডেকেছে।
এগুলো কি তার প্রাপ্তি নয়?

এত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে সে আজকে অত্র এলাকায় বিশাল গোফের অধিকারী, এটাও কম কিসের?

#পরামর্শ
√ ১: সব সময় সরিষার তৈল দিয়ে গোফের যত্ন নিতে হবে।
√ ২:নিন্দুকের কথায় কান দেওয়া যাবে না।
√ ৩:গোফ কম্পিটিশনে যেতে হলে আরো দিনরাত পরিশ্রম করে গোফ সাজাতে হবে।